ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বসে ছিলাম।একা একা। দেয়ালের উপর বসে পা ঝুলিয়ে।
আমার সামনে স্কুল বা কলেজের ড্রেস পরে কিছু ছেলে গান গাচ্ছে।
 তার পাশে কিছু বন্ধুবান্ধবি সহ একটা ফ্রেন্ড সার্কেল। পোশাক দেখে বোঝাই যায় অতি উচ্চবিত্তের ছেলে মেয়ে তারা।
নানা রকম ঠাট্টা তামাশা ,হই হুল্লোড়করে যাচ্ছে নিজেদের মধ্যে। ফ্রেন্ড সার্কেল বলে কথা। যে যার
গায়ে যেভাবে খুশি হাত দিচ্ছে, মারামারি করছে, জড়িয়ে ধরছে।
দেখে ভালই লাগছে (!!!) আধুনিক
বন্ধুত্ব।আফসোস ও লাগছে খানিকটা ,
আমার এমন কোন ফ্রেন্ড সার্কেল নেই।
আর ওদের দিকে তাকালাম না।
আশে পাশের কাপল আর লেকের পানি দেখেই সময় কাটাচ্ছিলাম।তার
কিছুক্ষণ পর। আমার সামনে দিয়ে ২
টা মেয়ে গেল।একজন শুকনা করে। আর
একজন অনেক মোটা আর কালো। পোশাক
পড়া ।
অবশ্য ঐ ফ্রেন্ড সার্কেলের মেয়েগুলার মত অত আধুনিক না।তারা যখন ফ্রেন্ড
সার্কেলের
পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো , তখন সবাই
মেয়েটাকে দেখে চিৎকার
করতে লাগল,
" বিশাল, বিশাল, বিশাল।" বোঝাই যায়
কালো মোটা মেয়েটাকে দেখে এই
চিৎকার। মেয়েটা অনেক দ্রুত ওদের
সামনে দিয়ে চলে গেল।
অনেকটা দৌড়ে পালাবার মত।
মেয়েটা চলে যাবার পর ফ্রেন্ড সার্কেলের আধুনিক
ছেলেমেয়ে গুলো হাসিতে ফেটে পড়ল।
লেকের পাড় কাপিয়ে ফেলবার মত
অবস্থা। যেন কত আনন্দের
একটা ঘটনা ঘটে গেছে। কত সুখের
ঘটনা ঘটেছে। আমি ঐ জায়গা থেকে উঠে চলে আসলাম।
মনে মনে ভাবলাম, আসলেই কত ভাল
পরিবারের ছেলে মেয়ে এরা।
আধুনিকতায় গা ভাসানো উচ্চবিত্তের
ছেলে মেয়ে।আমরাই খ্যাত, আনস্মার্ট।
পরিবার থেকে কি রকম শিক্ষা পেলে একটা মানুষের
দুর্বলতা নিয়ে তাকে কটূক্তি করতে পারে
ভাবনায় নেই।মেয়েটা হয়ত সারাক্ষণ
এমনিতেই তার শারীরিক
অবস্থা নিয়ে হতাশ,দুঃখী। আজ আবার
হয়তো নতুন করে ঘরে গিয়ে কাঁদবে। বেসিনে গিয়ে মুখ ধুয়ে বার বার
চোখের জল থামাবার চেষ্টা করবে।
তবুও থামবে না। বার বার
বলে যাবে সৃষ্টিকর্তাকে ,কেন
সে এমন? কেন তাকে এমন
করে সৃষ্টি করল? মনের ভিতরে ভিতরে পুড়বে, কষ্ট পাবে। আর
সান্ত্বনা দেবার মত একজনকে চাইবে।
আর ঐদিকে ঐ ফ্রেন্ড সার্কেলের
ছেলে মেয়েগুলো আধুনিকতায়
ভেসে অন্য
আনন্দ করবে। অমন কাউকে নিয়ে মজা করবে।
আত্মঅহংকারে নিজেকে সব কিছুর
উপরে ভাববে।তাদের এই সৌন্দর্যের
দাম কি?নিজেকে তো ঠিকই
ক্ষণে ক্ষণে নোংরা করে ফেলছে।এই
নোংরা ,দামি সাবানে যায় না। এই নোংরার গন্ধ, দামি বডি স্প্রে ,
পারফিউমে যায় না। সারাজীবন
গায়ে লেপ্টে থাকে। এর চেয়ে ঐ
মেয়ে অনেক ভাল। যে মুখ
বুঝে কথা গুলো শুনে গেছে। জুতার
তলাটা মুখের ভিতর এসে লাগিয়ে দিয়ে যায় নি।
শারীরিক সৌন্দর্য বা অসৌন্দর্য
আপেক্ষিক ব্যাপার। আপনার
একটা জিনিস খারাপ লাগতেই পারে।
মুখ বুজে থাকুন। দুনিয়াকে তা জানাবার
দরকার নেই। সৃষ্টিকর্তা সবার ভিতর সুন্দর কিছু দিয়েছেন। কারও মুখ
দেখতে ভাল লাগে, কারও চোখ দেখতে।
কারও চাই সাদা চামড়া, কারও চাই
সাদা মন।মনটাকে ঠিক করুন।কোন
সৃষ্টিকে তুচ্ছ করবার আগে নিজের
দিকে তাকান। নিজের ভুলগুলো দেখুন। কাউকে অসম্মান করা মহত্ত্বের কিছু
না। মানুষ হন, আর কতদিন জানোয়ারের
মত মানসিকতা রাখবেন। মানিব্যাগ,
পার্স ভর্তি টাকা থাকলেই,
সাদা চামড়া, সুঠাম দেহ, আধুনিক
পোশাক পরলে, গায়ে সুগন্ধি লাগালেই ভাল মানুষ হওয়া যায় না।মানুষ
হতে সুন্দর মন লাগে। মানুষকে সম্মান
করা শিখতে হয়।